ভারতে দুর্নীতির কারণ কী কী?

ভারতে দুর্নীতির অনেক জটিল কারণ রয়েছে, যা অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে বিদ্যমান। এর কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা (Bureaucratic Red Tape and Complexity):
 * অতিরিক্ত নিয়ম-কানুন ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থা: ভারতে বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পেতে বা ব্যবসা শুরু করতে অনেক জটিল নিয়ম-কানুন ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই জটিলতা মানুষকে ঘুষ দিতে উৎসাহিত করে, যাতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হয়।
 * স্বচ্ছতার অভাব (Lack of Transparency): সরকারি প্রক্রিয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাব দুর্নীতির জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে। যখন পদক্ষেপগুলো জনসমক্ষে থাকে না, তখন কর্মকর্তারা ধরা পড়ার বা শাস্তি পাওয়ার ভয় ছাড়াই দুর্নীতিতে জড়িত হতে পারে।
 * ক্ষমতার অপব্যবহার (Misuse of Discretionary Powers): সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে থাকা স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দুর্নীতির একটি প্রধান কারণ। তারা নিজেদের ক্ষমতা ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করতে পারে।
২. অর্থনৈতিক কারণ (Economic Factors):
 * কম বেতন (Low Salaries): বিশেষ করে নিম্ন-পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
 * দারিদ্র্য ও বেকারত্ব (Poverty and Unemployment): দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব অনেক সময় মানুষকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে, কারণ তারা যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে।
 * অর্থনৈতিক বৈষম্য (Economic Disparities): সমাজের উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যায় সুবিধা আদায় করে, যা দুর্নীতির কারণ হয়।
৩. রাজনৈতিক কারণ (Political Factors):
 * রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব (Lack of Political Will): দুর্নীতি দমনের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শক্তিশালী সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব একটি বড় সমস্যা।
 * রাজনৈতিক অর্থায়ন (Political Funding): রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল সংগ্রহে অস্বচ্ছতা দুর্নীতির জন্ম দেয়। অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করে এবং ক্ষমতায় এসে তাদের সুবিধা দেয়।
 * রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ (Political Interference): সরকারি প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করে।
 * ভোট ব্যাংক রাজনীতি (Vote Bank Politics): অনেক সময় রাজনৈতিক নেতারা তাদের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে দুর্নীতির আশ্রয় নেন এবং অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন।
৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ (Social and Cultural Factors):
 * লোভ-লালসা (Greed): অতিরিক্ত লোভ-লালসা দুর্নীতির একটি মৌলিক কারণ। মানুষ দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনে লিপ্ত হয়।
 * জবাবদিহিতার অভাব (Lack of Accountability): সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে জবাবদিহিতার অভাব দুর্নীতির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। শাস্তির ভয় না থাকায় অনেকে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
 * সামাজিক সহনশীলতা (Social Tolerance): অনেক ক্ষেত্রে সমাজে দুর্নীতির প্রতি এক ধরনের সহনশীলতা দেখা যায়। মানুষ দুর্নীতিকে নিয়তি হিসেবে মেনে নেয় বা মনে করে যে, এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
 * অশিক্ষা ও অসচেতনতা (Illiteracy and Lack of Awareness): সাধারণ মানুষের মধ্যে অধিকার ও আইন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব থাকলে তারা সহজেই দুর্নীতির শিকার হন।
 * আত্মীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি (Nepotism and Cronyism): সরকারি নিয়োগ ও সুযোগ-সুবিধায় মেধার পরিবর্তে আত্মীয় বা পরিচিতদের প্রাধান্য দেওয়া দুর্নীতির একটি সাধারণ রূপ।
৫. বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা (Weaknesses in the Judicial System):
 * ধীর বিচার প্রক্রিয়া (Slow Judicial Process): বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব অপরাধীদের সাহস যোগায়।
 * শাস্তির অভাব (Lack of Strict Punishments): দুর্নীতিবাজদের কঠোর ও দ্রুত শাস্তি না হওয়ায় দুর্নীতি কমে না। অনেক সময় তারা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এই কারণগুলো একে অপরের সাথে জড়িত এবং ভারতের দুর্নীতির সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।

ভারতের প্রথম দুর্নীতির মামলা কোনটি?

জিপ কেলেঙ্কারি মামলা। জিপ কেলেঙ্কারি মামলাটি ১৯৪৮ সালে সংঘটিত হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে যখন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার ভি কে কৃষ্ণ মেনন প্রোটোকল উপেক্ষা করে একটি বিদেশী সংস্থার সাথে সেনাবাহিনীর জিপ কেনার জন্য ৮০ লক্ষ টাকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

Post a Comment

Thanks for visiting

নবীনতর পূর্বতন