তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ

তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু বড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এবং জনমানসে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কেলেঙ্কারি হলো:
১. সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি (Saradha Group Financial Scam - 2013): এটি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলির মধ্যে অন্যতম। সারদা গোষ্ঠী একটি পঞ্জি স্কিম চালাচ্ছিল, যেখানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং পরে তা ফেরত দেওয়া হয়নি। এই কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীর নাম জড়িয়েছিল। মদন মিত্র, কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসুর মতো তৃণমূলের একাধিক নেতাকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।
২. রোজ ভ্যালি আর্থিক কেলেঙ্কারি (Rose Valley Financial Scandal): সারদা কেলেঙ্কারির মতোই এটিও একটি বৃহৎ পঞ্জি স্কিম কেলেঙ্কারি। রোজ ভ্যালি গোষ্ঠীও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিল। এই কেলেঙ্কারিতেও তৃণমূলের কিছু নেতার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
৩. নারদা স্টিং অপারেশন (Narada Sting Operation - 2016): নারদ নিউজ নামে একটি সংবাদ সংস্থা গোপন ক্যামেরায় একটি স্টিং অপারেশন চালায়, যেখানে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদ এবং বিধায়ককে একটি কাল্পনিক কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে নগদ টাকা নিতে দেখা যায়। এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সুব্রত মুখার্জি, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুলতান আহমেদ, শুভেন্দু অধিকারী (তৎকালীন টিএমসি নেতা, বর্তমানে বিজেপি), অপূর্ব ভট্টাচার্য, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, ইকবাল আহমেদ, সৈয়দ মাকসুদ আলী, এবং মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলররা জড়িত ছিলেন।
৪. শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারি (West Bengal School Service Recruitment Scam - 2022): এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কেলেঙ্কারি। পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBPE)-এর মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই মামলায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয় এবং তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও সোনা উদ্ধার হয়। এই কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের একাধিক নেতা ও প্রভাবশালীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
৫. কয়লা পাচার মামলা (Coal Smuggling Case - 2022): পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত অঞ্চলে অবৈধ কয়লা পাচারের ঘটনায় তৃণমূলের বেশ কিছু নেতার নাম উঠে এসেছে। এই মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও জড়িয়েছে।
৬. গরু পাচার মামলা (Cattle Smuggling Case - 2022): বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের ঘটনায় তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গরু পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
এগুলো ছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজি, সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয় এবং স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই কেলেঙ্কারিগুলি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এবং বিরোধীরা প্রায়শই এগুলি নিয়ে শাসক দলকে আক্রমণ করে।

Post a Comment

Thanks for visiting

নবীনতর পূর্বতন